অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :বরিশাল জেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাক্কালে আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও জামাত আমীরকে প্রধান অতিথি করে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঈদ-ই মিলাদুন্নবীর দাওয়াতপত্র বিলি করায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ স্বাধীনতাপ্রেমী সর্বস্তরের জনগণ। তারা অনুষ্ঠান প্রতিরোধের হুঁশিয়ারী দিয়েছে।
জানা গেছে, গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগামী ২১ জানুয়ারি বার্ষিক ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর আয়োজন করে প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুলে হকের নামে দাওয়াতপত্র বিলি করেন। ওই দাওয়াতপত্রে বিদ্যালয় সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মোল্লার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ১৯৭১ সালে বরিশাল জেলায় আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও জেলা জামাত আমীর মাওলানা শিহাব উদ্দিন খানকে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক জসীম সরদার ও পিস কমিটির সভাপতি আফতাব মুন্সীর ছেলে আলাউদ্দিন ফারুকীর নাম রয়েছে। তাদের নাম সংবলিত দাওয়াতপত্র উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পৌঁছালে সর্বত্র চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিহত করতে ক্ষোভে ফেটে পরেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল। একারণে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক (অব:) লিয়াকত আলী হাওলাদারের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠান বাতিল করতে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল হক সরদার, আবু বকর সিদ্দিক, তাজুল ইসলাম, আহমেদ আলী জালাল, তৈয়ব আলী ভুঁইয়া, লুৎফর রহমান তালুকদার, আ. গনি হাওলাদার, করম আলী সরদার প্রমুখ। এসময় বক্তারা অনুষ্ঠান প্রতিরোধ করতে আজ বুধবার গৈলা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভা আহ্বাণ করেছেন। পাশাপাশি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অনুষ্ঠান প্রতিরোধের আহ্বান জানান। এঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বরিশাল জেলা সহকারী ইউনিট কমান্ডার আ. রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, যে স্কুলের ছাত্র ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যেখানে পদচারণা ছিল নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্য সৈনিক তারক চন্দ্র সেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিপাহী আলাউদ্দিনের সমাধি স্থান রয়েছে এই স্কুলে। ওই স্কুলের শিক্ষার্থী ও পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারী ছিলেন শহীদ মন্ত্রী আ. রব সেরনিয়াবাত। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামীলীগ সরকার যে মূহুর্তে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান রেখেছে সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধ সূচনালগ্নে শহীদ আ. রব সেরনিয়াবাতের নির্দেশে যে গৈলা স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হত সেই স্কুলের অনুষ্ঠানে একজন স্বাধীনতা বিরোধীকে প্রধান অতিথি করার কথা কেউ মেনে নিতে পারেনা। ঘটনা নিয়ে উপজেলার সর্বত্র তোলপাড় শুরু হলে প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক সাংবাদিকদের জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ঘটনা সম্পর্কে জানাবেন। এব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মোল্লা জানান, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করে ঢাকায় যান। তার অনুপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক ও এলাকার লোকজন মাওলানা শিহাব উদ্দিন খানকে প্রধান অতিথি করে দাওয়াতপত্র বিলি করেছেন। তিনি ঘটনা জানার পরই অনুষ্ঠান বাতিল করবেন। ঘটনার জন্য তিনি প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট উপ-কমিটিকে শো’কজ করবেন। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন সরদার বলেন, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া ও বিদায় অনুষ্ঠানের চিঠিতে আমাকে বিশেষ অতিথি রাখার কথা প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। কিন্তু মিলাদুন্নবীর দাওয়াতপত্রে কাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে সে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এমনকি আমাকে ওই দাওয়াতপত্র দেয়া হয়নি।